বরিশালের নদী-নালা ও খালবিলে ভাসমান নৌকাতেই বসবাস মান্তা সম্প্রদায়ের। মাছ ধরা ও মাছ বিক্রিই তাদের জীবিকার প্রধান উপায়। পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে পরিশ্রম করলেও মান্তা জেলে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন নানান মৌলিক অধিকার ও সুবিধা থেকে।

প্রথমত, আর্থিক বঞ্চনা। নারীরা স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে জাল টানেন, মাছ শুকান, বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন—কিন্তু বাজারে বিক্রির টাকা পুরোপুরি পুরুষদের হাতেই থাকে। নিজস্ব আয় বা আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই তাদের।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা থেকে বঞ্চনা। নৌকায় বসবাস করায় শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্যও কোনো বিকল্প শিক্ষা বা দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি নেই।

তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চনা। মান্তা নারীদের জন্য নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নেই প্রসূতি সেবা। নারীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় স্যানিটারি প্যাড কিংবা প্রয়োজনীয় সচেতনতার ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা নানা রোগ-ব্যাধিতে ভোগেন, অথচ চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও সীমিত।

চতুর্থত, সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চনা। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না মান্তা নারীরা। ফলে সরকারি ভিজিএফ কার্ড, ভাতা বা অন্যান্য সহায়তা থেকেও তারা বঞ্চিত থেকে যান।

পঞ্চমত, নিরাপত্তাহীনতা। নৌকায় ভেসে বসবাসের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নদীর খরস্রোত তাদের জীবনে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। নারীরা প্রায়শই ঝড়-বন্যায় সর্বস্ব হারান, কিন্তু পুনর্বাসনের কোনো নিশ্চয়তা পান না।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মান্তা জেলে নারীরা সমান পরিশ্রম করেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ, সামাজিক স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঞ্চনার শিকার। উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপে তাদের অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি।